আপনার হার্ট ভালো নেই? এই ৭টি লক্ষণে বুঝে নিন এখনই
হৃদপিণ্ড আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। এটি প্রতিনিয়ত রক্ত পাম্প করে আমাদের শরীরকে সচল রাখে। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস ও উপেক্ষিত উপসর্গের কারণে অল্প বয়সেই হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ছে বহু মানুষের। ভালো খবর হলো — কিছু প্রাথমিক লক্ষণ দেখে আগে থেকেই বোঝা যায় ‘আপনার হার্ট ভালো নেই’, এবং সময়মতো ব্যবস্থা নিলে বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
এই প্রবন্ধে আমরা জানবো কীভাবে আপনি বুঝবেন আপনার হৃদযন্ত্র (Heart) ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা এবং কী উপসর্গগুলো দেখলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করা উচিত।
১. নিয়মিত ক্লান্তি ও দুর্বলতা
স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্ম করার পর যদি অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন অথবা হাঁটাহাঁটির সময় দম ধরে আসে, তবে তা হতে পারে হার্টের দুর্বলতার প্রাথমিক লক্ষণ। হৃৎপিণ্ড যদি রক্ত সঠিকভাবে পাম্প করতে না পারে, তবে শরীরে অক্সিজেন পৌঁছায় কম — ফলে ক্লান্তি, হালকা মাথা গোমরা অবস্থা সৃষ্টি হয়।
২. বুকে চাপ, ব্যথা কিংবা জ্বালাভাব
হঠাৎ করে বুকের মাঝখানে চাপ অনুভব, ভারী ভাব, ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হার্ট অ্যাটাকের পূর্বলক্ষণ হতে পারে। অনেকেই একে অ্যাসিডিটির সমস্যা ভেবে অবহেলা করেন, কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে এটি হৃদরোগের অতি সাধারণ সতর্ক সংকেত।
বিশেষ লক্ষণ:
- ব্যথা বাম হাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে
- ঘাড়, চোয়াল বা পিঠে ব্যথা
- হজমের সমস্যার মতো লাগা

৩. অনিয়মিত হার্টবিট বা বুক ধড়ফড়
বিশ্রামের সময়ও যদি কারো হৃদস্পন্দন অতি দ্রুত হয় বা অস্বাভাবিকভাবে অনিয়মিত অনুভব হয় (Arrhythmia), তাহলে তা হৃদরোগের উপসর্গ হতে পারে। বুক ধড়ফড় করা, মৃদু কাঁপুনি বা স্পন্দনের অনুভূতি দেখা দিলে দ্রুত কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৪. পা বা গোড়ালিতে ফোলাভাব
হার্ট ঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে তরল জমা শুরু হয়, যাকে বলে fluid retention। এতে পা, পায়ের পাতা বা গোড়ালি ফেঁপে ওঠে। এটি সাধারণত Congestive Heart Failure-এর সূচনালক্ষণ।
৫. শ্বাসকষ্ট বা দ্রুত দম ধরে যাওয়া
সিঁড়ি ভাঙতে গিয়েই হাপিয়ে যাওয়া, কিংবা খাটে শোয়ার সময় শ্বাস নিতে সমস্যায় পড়ছেন? এমনটা হলে অবিলম্বে গুরুত্ব দিন, কারণ হৃদয়ে অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি ঘটছে। এটি Heart Failure বা Coronary Artery Disease-এর গুরুত্বপূর্ণ বোঝাপড়ার লক্ষণ।
৬. মাথা ঘোরা বা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
তিনি যদি হঠাৎ করেই মাথা ঘোরার অভিযোগ করেন বা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন — তবে সেটি হতে পারে হৃৎপিণ্ডের কাজের বিপর্যয়ে উৎপন্ন রক্ত সরবরাহের ঘাটতির ফল। চিকিৎসা জরুরি হয়ে পড়ে।
৭. পেটের সমস্যা, হজমের ব্যাঘাত ও বমি বমি ভাব
হৃদরোগের কিছু উপসর্গ সরাসরি পেটে প্রভাব ফেলে। যেমন—অম্বল, বমি বমি ভাব, অথবা পেটে চাপ লাগা। এসব উপসর্গ দেখে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাকেই এড়িয়ে যান।
কখন চিকিৎসক দেখানো জরুরি?
- একাধিক উপসর্গ একসঙ্গে দেখা দিলেই
- বারবার হালকা শরীর খারাপ লাগে
- হঠাৎ কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে যান
- ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হয়
আপনার শরীর যেভাবে সিগন্যাল দেয়, তা উপেক্ষা করবেন না।
হার্ট ভালো রাখতে যেভাবে লাইফস্টাইল পরিবর্তন করা উচিত
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন:
- বেশি করে ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য খান
- অলিভ অয়েল, স্যামন মাছ, বাদাম-এ থাকা ভালো চর্বি গ্রহণ করুন
- লবণ ও চিনি কমান, প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন
পরিমিত ব্যায়াম করুন:
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন বা হালকা ব্যায়াম করুন
পানির পরিমাণ ঠিক রাখুন:
- পানির স্বল্পতা রক্তে ঘনত্ব সৃষ্টি করতে পারে — হার্টের ওপর চাপ বাড়ায়
ঘুম এবং স্ট্রেস কমান:
- পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ কমিয়ে হৃদয়ের স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দিন
বাড়িতে হার্ট রেট পরীক্ষা করবেন যেভাবে:
ধাপ:
- তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল কব্জিতে রাখুন
- ২০ সেকেন্ডে যতগুলো স্পন্দন মাপেন
- সংখ্যাটিকে ৩ দিয়ে গুণ করুন = আপনার হার্ট রেট (BPM)
হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের সাধারণ ধারনা পেতে এই পদ্ধতি কার্যকর
উপসংহার
হার্টের যত্নের শুরু হয় সচেতনতা থেকে। আপনি যদি বুঝতে পারেন “আপনার হার্ট ভালো নেই, বুঝবেন যেভাবে” তা সময়পূর্বে ধরতে পারছেন, তবে বড় কোনও হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কমিয়ে আনতে পারবেন বহুগুণে। আজই কিছু ছোট উদ্যোগ নিন — স্বাস্থ্যকর খাবার খান, স্ট্রেস কমান এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।