উজ্জ্বল, দাগহীন, কোমল ও মসৃণ ত্বক আমাদের কার না ভালো লাগে? ধুলাবালি, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য আমাদের ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়।
দৈনন্দিন জীবনে কাজের চাপে অথবা সময়ের অভাবে বেশির ভাগ সময় আমরা পার্লারে যেতে পারিনা তাই আজকে জেনে নেওয়া যাক ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা যায়।
বরফের ব্যবহার
প্রতিদিন এক টুকরো বরফ ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। ত্বকের দাগছোপ ও ব্রণ কমে, রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, চোখের নীচে ফোলা ভাবও নিরাময় হয়।
তাই বাইরে থেকে ফিরে ভালো করে মুখ পরিষ্কার করে এক টুকরো বরফ ঘষে নিন। দেখবেন এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে আর ত্বকের নানা সমস্যাও কমবে।
এমনকি শুধু বরফও মুখে ঘষতে পারেন, আবার বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে আইস কিউব তৈরি করেও মুখে লাগাতে পারেন।
অ্যালোভেরা এবং বেসিল আইস কিউব
অ্যালোভেরা এবং বেসিল উভয় প্রাকৃতিক উপাদানই ত্বকের জন্য চমৎকার। অ্যালোভেরা ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব কমায় এবং ব্রণ নিরাময় করে। আর বেসিলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য, যা ত্বকের ট্যান কমায় এবং ত্বককে প্রশমিত করে।
বেসিল পাতা গুঁড়ো করে এক কাপ পানিতে মেশান। এতে দুই চা চামচ অ্যালোভেরাও পানিতে মিশিয়ে দিন। সব উপকরণ ভালো ভাবে মেশানো হয়ে গেলে একটি আইস কিউব ট্রেতে ঢেলে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। বরফ জমে গেলে এক একটা করে কিউব মুখে মাখুন।
গোলাপ জল আইস কিউব
ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে গোলাপ জল। প্রতিদিন গোলাপ জলের আইস কিউব দিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করলে ত্বক উজ্জ্বল হবে, দাগছোপ কমবে, বলিরেখাও দূর হবে।
এক কাপ গোলাপ জলের সঙ্গে এক কাপ সাধারণ পানি মিশিয়ে আইস কিউব ট্রেতে ঢেলে দিন। ফ্রিজে রাখুন বেশ কিছুক্ষণ। বরফ জমে গেলে এক একটা করে কিউব প্রতিদিন মুখে মাখুন।
শসা এবং লেবু আইস কিউব
শসা এবং লেবুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করে, ত্বকের সতেজতা বাড়ায়। এই আইস কিউব ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে, ব্রণ, ব়্যাশ এবং ত্বকের লালচেভাব দূর করবে।
প্রথমে শসার পেস্ট তৈরি করে নিন। এর সঙ্গে একটি লেবুর রস মিশিয়ে আইস কিউব ট্রেতে ঢেলে ফ্রিজে রাখুন কয়েক ঘণ্টা। তারপরে মুখে মাখুন।
কেশর আইস কিউব
রুপচর্চায় কেশরের ব্যবহার বহু প্রাচীন। নিয়মিত কেশর আইস কিউব ব্যবহারে ট্যান, দাগছোপ, পিম্পল, পিগমেন্টেশন হালকা হবে এবং ত্বক ঝলমলে হয়ে উঠবে।
কয়েকটি কেশর পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এই পানিতেই পরিমাণমতো গোলাপ জল মিশিয়ে বরফের ট্রে ভর্তি করুন। বেশ কয়েক ঘণ্টা ফ্রিজে রাখুন। তারপর মুখে ব্যবহার করুন।
হলুদ আইস কিউব
হলুদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না। চোখের নীচে কালো দাগ এবং পিগমেন্টেশন কমাতেও সাহায্য করে।
একটি পাত্রে এক চামচ হলুদ গুঁড়ো এবং এক কাপ গোলাপ জল মিশিয়ে আইস ট্রেতে ঢেলে দিন। ডিপ ফ্রিজে বেশ কয়েক ঘণ্টা রাখুন। বরফ জমে গেলে এক একটা করে মুখে মাখুন।
পাতিলেবুর রস
পাতিলেবুর রস ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
পাতিলেবুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে অনেকেই ব্যবহার করেন। কিন্তু সরাসরি লেবুর রস ত্বকে লাগাবেন না। এর প্রভাবে ত্বকে তীব্র জ্বালাভাব ও নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই সরাসরি লেবুর রস না লাগিয়ে তার সাথে অন্য কিছু মিশিয়ে লাগাতে পারেন।
১ চামচ লেবুর রসের সাথে ১ চা চামচ চিনি মিশিয়ে সার্কুলার মোশনে ত্বকে ম্যাসাজ করুন। চিনি গলে গেলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। লেবুর রস ব্যবহার করার পর অতি অবশ্যই ভালো কোনও ময়েশ্চরাইজার লাগিয়ে নিবেন। পাতিলেবুর রস ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
মসুর ডাল
মসুর ডাল ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। মসুর ডাল বেশ কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভেজা মসুর ডাল বেটে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। মুখে ডাল দিয়ে কথা না বলাই ভালো, মুখে ডাল শুকিয়ে যাওয়ার পর কথা বললে মুখের চামড়ায় চাপ লাগতে পারে।
মধু
মধু এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, ত্বক নরম রাখে, বলিরেখা ও কালচে ভাব দূর করে। এ ছাড়া ব্রণের জীবাণুও ধ্বংস করতে মধু বেশ কার্যকর। খুব কম সময়েই উজ্জ্বল ত্বক পেতে চাইলে মধুর কোনো বিকল্প নেই। মধু সরাসরি মুখে লাগাতে পারেন, কিন্তু বেশী ফলাফল পেতে হলে মধুর সাথে দুধ, দই, কলা, পেঁপে, লেবুর রস এসবের যে কোন কিছু মিশিয়ে লাগাতে পারেন।
কলা
অল্প সময়ে ত্বক উজ্জ্বল করতে কলার কোনও বিকল্প নেই। তার সাথে যদি দুধকে কাজে লাগানো হয়, তাহলে তো কথাই নেই। একটা কলাকে চটকে নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো দুধ মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে। তবে খেয়াল রাখবেন পেস্টটা যেন একেবারে মিহি হয়ে যায়। তাহলে অনেক ভাল কাজ দেবে।
শসা
শসা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে অনেক ভালো কাজ করে। তিন টেবিল চামচ শসার রসের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। কাচের মুখবন্ধ বয়ামে মিশ্রণটি সংরক্ষণ করুন। দিনে কয়েকবার এই মিশ্রণ দিয়ে মুখ মুছে নিন। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে ও ত্বককে কোমল রাখবে।
অ্যালোভেরা ব্যবহার
অ্যালোভেরা ত্বকের যত্নে উপকারী। এতে আছে বিভিন্ন উপকারী উপাদান। যেমন ভিটামিন, এনজাইম, মিনারেল, সুগার, লিগনিন, স্যাপোনিন, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড। ভিটামিন এ, সি এবং ই আছে এই অ্যালোভেরায়। এগুলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ভূমিকা পালন করে। অ্যালোভেরায় আরও আছে ভিটামিন বি ১২, ফলিক অ্যাসিড এবং কোলাইন। তাই ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
বেসনের ফেসপ্যাক ব্যবহার
ত্বক উজ্জ্বল করতে ব্যবহার করতে পারেন বেসন। ৩ টেবিল চামচ বেসন, ১ টেবিল চামচ হলুদ এবং ৩ টেবিল চামচ টক দই নিন। এবার একটি পাত্রে সব উপাদান মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মুখে, গলায় ও ঘাড়ে লাগিয়ে নিন। এভাবে অপেক্ষা করুন মিনিট বিশেক। এরপর মুখ ধুয়ে নিন। আপনি যদি নিয়মিত বেসনের এই ফেসপ্যাক ব্যবহার করেন তবে তা ত্বকের দাগ-ছোপ দূর করে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়।
Leave a Comment