দ্রুত টাকা জমাতে চাইছেন? ১০টি সহজ কৌশল জেনে নিন!
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে দ্রুত টাকা জমানোর সহজ কৌশল জানা এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং একটি প্রয়োজনীয় দক্ষতা। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, আয়ের সীমাবদ্ধতা ও দৈনন্দিন ব্যয়ের চাপ আমাদের অর্থ সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে বাধ্য করছে। আপনি যদি দৈনন্দিন খরচ নিয়ন্ত্রণে রেখে ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ একটা আর্থিক ভিত্তি গড়তে চান, তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
১. বাজেট তৈরি করুন—সঞ্চয়ের প্রথম ধাপ!
দ্রুত টাকা জমানোর মূল কৌশল শুরু হয় সঠিক বাজেটের মাধ্যমে।
কীভাবে করবেন?
- মাসের শুরুতেই আয় ও ব্যয়ের লিখিত তালিকা তৈরি করুন
- ব্যয় বিভাগগুলো (খাবার, ভাড়া, বাচ্চার স্কুল, ইন্টারনেট, ওয়াশিং, ফ্যাশন) শ্রেণিবদ্ধ করুন
- কোথায় অপ্রয়োজনীয় খরচ করছেন তা চিহ্নিত করুন
এটি করলে আপনি বুঝতে পারবেন কোথায় খরচ কমিয়ে সঞ্চয় করতে পারবেন।
২. অপ্রয়োজনীয় খরচ কমান—সঞ্চয়ের রাজপথের চাবিকাঠি
আমরা প্রায়ই আবেগে বাইরের খাবার, নতুন জামা বা অফারের মোহে যা দরকার নেই সেটাও কিনে ফেলি।
কমানো সম্ভব যেসব জায়গায়:
- রেস্টুরেন্টে খাওয়া
- ‘অফার’ দেখে অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা
- ব্র্যান্ডেড উপহার
- ধূমপান ও বাজি খেলা
- নিয়মিত কফি শপে যাওয়া
টিপস: দোকানের অফার মেইল আনসাবস্ক্রাইব করুন। তাতে প্রলুব্ধ হওয়ার সুযোগ কমবে।
৩. প্রতিদিন খরচের হিসাব রাখুন
আপনার সব খরচের রেকর্ড রাখুন — হোক সেটা ২০ টাকার চা, কিংবা ৫০০ টাকার বাস ভাড়া।
কেন দরকার?
- খরচের নিয়ন্ত্রণ আনতে
- অপ্রয়োজনীয় খরচ চিহ্নিত করতে
- মাস শেষে বিশ্লেষণ করে সেভিংস বাড়াতে
মোবাইলে ‘মনি ম্যানেজার’ বা ‘এক্সপেন্স ট্র্যাকার’ অ্যাপ ব্যবহার করুন।
৪. আয় বাড়ানোর নতুন পন্থা অনুসন্ধান করুন
শুধু খরচ কমিয়ে অনেক দূর এগোনো যায় না। আপনার আয় না বাড়ালে দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় ধীরগতির হবে।
কীভাবে আয় বাড়াবেন?
- ফ্রিল্যান্সিং (Fiverr, Upwork)
- প্রাইভেট টিউশনি
- অনলাইন রিসেলিং
- ফুড ডেলিভারি/লোকাল সার্ভিস অ্যাপ ভিত্তিক কাজ
মনে রাখবেন, একাধিক আয়ের উৎস থাকলে সঞ্চয় অনেক সহজ হয়।

৫. আগে সঞ্চয়, পরে খরচ–৫০/৩০/২০ রীতি অনুসরণ করুন
আপনার আয়ের ৫০% ব্যয় করুন নিত্য প্রয়োজনীয়তায়, ৩০% জীবনযাপনে, আর ২০% সঞ্চয়ে রাখুন।
উদাহরণ:
আয় = ২৫,০০০ টাকা
- ৫০% = ১২,৫০০ (খাবার, ভাড়া, বিল)
- ৩০% = ৭,৫০০ (বিনোদন, কেনাকাটা)
- ২০% = ৫,০০০ (সঞ্চয়)
মাসের শুরুর দিকেই সঞ্চয়ের টাকা আলাদা করে রাখুন।
৬. একটি লাভজনক সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলুন
আপনার টাকা এমন একটি সেভিংস অ্যাকাউন্টে রাখুন যেখানে সুদের হার ভালো।
টিপস:
- ব্যাঙ্ক অফিসে গিয়ে ইন্টারেস্ট রেট জেনে নিন
- অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে মাসিক চার্জ থাকে কি না দেখুন
- ছোট অঙ্কে সঞ্চয় করে ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকুন
৭. কার্ড নয়, ক্যাশে লেনদেন করুন – মানিব্যাগের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনুন
কার্ড ব্যবহার করলে আপনি খরচের হিসাব ও সীমা হারাতে পারেন।
কেন ক্যাশ ভালো?
- খরচে নিয়ন্ত্রণ আসে
- অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা কমে
- চোখের সামনে কতো টাকা আছে তা বোঝা যায়
শুধু জরুরি প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহার করুন।
৮. ঘরের খাবার খান – স্বাস্থ্য ও টাকা দুই-ই সুরক্ষিত
প্রতিদিন অফিস বা বাইরে খাওয়ার বদলে ঘরে রান্না করা খাবার খেলে সঞ্চয় অনেক বেড়ে যাবে।
বছরে প্রায় ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় সম্ভব শুধুমাত্র বাহিরের খাবার বাদ দিয়ে।
৯. সাপ্তাহিক বাজার একবারে করুন – ডিসকাউন্টের সদ্ব্যবহার করুন
- একবারে মাসিক কেনাকাটা করলে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে
- পণ্য কেনার আগে একটি লিস্ট তৈরি করুন – সেই লিস্টের বাইরে কিছু কিনবেন না
কেনাকাটার সময় ‘অফার’ দেখেই কিছু কিনবেন না।
১০. মানসিকতা পরিবর্তন করুন – সঞ্চয়কে অভ্যাসে পরিণত করুন
সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো অর্থ সঞ্চয়ে সহনশীল ও ধৈর্যশীল হওয়া।
নিয়ে ভাবুন:
- বাড়ির জন্য ডাউন পেমেন্ট
- সন্তানেররা ভবিষ্যত শিক্ষা ব্যয়
- জরুরি চিকিৎসা খরচ
- স্বাধীন জীবনযাপন
এই লক্ষ্যগুলো যদি মনে রাখেন, তাহলে নিজ থেকেই খরচ কমাতে শুরু করবেন।
উপসংহার:
দ্রুত টাকা জমানোর সহজ কৌশল আসলে জীবনধারায় ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমেই সম্ভব। যেহেতু আমাদের প্রত্যেকেরই ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, তাই আজ থেকেই সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলুন। মনে রাখবেন, বড় অঙ্কে সঞ্চয় একদিনে সম্ভব নয়; ধাপে ধাপে, নিয়মিতভাবে, সচেতনভাবে ও সংযম বজায় রেখে হলেও সেটা করা সম্ভব।