সন্তানকে কৃতজ্ঞতা শেখানোর ১০টি কার্যকর কৌশল

আজকের প্রতিযোগিতামূলক ও ভোগবাদী সমাজে শিশুরা অতি সহজেই অধিকারবোধী হয়ে উঠতে পারে। তাদের প্রাপ্তিকে স্বাভাবিক ও ‘যেহেতু আমি চাই, সেহেতু পাওয়াই উচিত’ — এই ভাবনায় বেড়ে ওঠার প্রবণতা বাড়ছে। কিন্তু একজন ভালো মানুষ হতে হলে কৃতজ্ঞতা এবং সদয়তা অপরিহার্য গুণ। আপনি যদি ভাবেন “সন্তানকে কৃতজ্ঞতা কীভাবে শেখাবেন?”, তবে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন।

সন্তানকে কৃতজ্ঞতা শেখানোর ১০টি কার্যকর পদ্ধতি

১. নিজেই হোন রোল মডেল

শিশুরা খুব সহজেই অভিভাবকদের আচরণ অনুকরণ করে। আপনি যদি প্রতিদিন ‘ধন্যবাদ’ বলেন, অন্যদের সাহায্য করেন, সহজ বিষয়গুলোর জন্য কৃতজ্ঞ থাকেন—তবে সন্তানও তাই শিখবে।

টিপস: হঠাৎ বৃষ্টি নামলে ছাতা দেওয়ার জন্য কাউকে ধন্যবাদ দিন—ওই ছোট দৃশ্যটিও সন্তানের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলবে।

২. প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভ্যাস গড়ে তুলুন

ডিনার টেবিলে বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে সন্তানকে জিজ্ঞেস করুন, “আজকের জন্য সবথেকে কৃতজ্ঞ কিসের জন্য?”
এটি ওদের মধ্যে ইতিবাচক চিন্তা এবং ছোট জিনিসের মূল্যায়ন শিখতে সাহায্য করে।

পরামর্শ: “কৃতজ্ঞতার জার” নামের একটি কাচের বোতলে প্রতিদিন সদয়তা/কৃতজ্ঞতার ঘটনা লিখে জমা করুন।

৩. সহানুভূতিশীল হতে শেখান

শিশুকে জিজ্ঞেস করুন, “যদি তুমি তার জায়গায় থাকতে, কেমন লাগতো?” এই প্রশ্ন তাদের অন্যের দুঃখ অনুভব করতে এবং মানবিক হতে শেখাবে।

৪. শিক্ষামূলক গল্প ও বইয়ের মাধ্যমে শেখান

ঈশপের গল্প বা কৃতজ্ঞতা ও দয়াশীলতার বিষয়ে শিশুতোষ বই পড়ে শোনান। শিশুরা গল্পে মজে যায় এবং চরিত্রগুলো অনুকরণ করে বাস্তবে।

বইয়ের পরামর্শ: “Kindness is My Superpower”, “Gratitude is My Attitude” ইত্যাদি শিশুদের জন্য উপযোগী।

৫. সীমাবদ্ধতার মাধ্যমে শিক্ষা দিন

সব আবদার পূরণ করা কৃতজ্ঞতা নষ্ট করে। শেখান, সব সময় সব কিছু পাওয়া যায় না, এবং যা রয়েছে—তাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত।

৬. দান ও স্বেচ্ছাসেবা শেখান

পুরাতন খেলনা, জামা বা বই অসচ্ছলদের মাঝে দান করতে দিন। তাদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করালে অন্যের অবস্থান বুঝতে পারবে এবং কৃতজ্ঞতা গড়ে উঠবে।

৭. প্রচেষ্টার মূল্য শেখান, ফল নয়

শুধু উপহার দেওয়া নয়, সন্তানকে ছোট ছোট কাজ করে কিছু অর্জনের সুযোগ দিন। এতে তারা উপলব্ধি করবে, প্রাপ্তি মানে শুধু ভাগ্য নয়—পরিশ্রমের ফল।

৮. অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে বিরত রাখুন

শিশুর হাতে সব পাওয়া সহজ হলে, ‘চাওয়া মানে পাওয়া’ মনোভাব তৈরি হয়। খেয়াল রাখুন, তারা যেন প্রতিটি জিনিসের পেছনের শ্রম ও মর্ম বুঝতে শেখে।

৯. সদয়তাকে উৎসাহিত করুন

যখন তারা অন্যদের সাহায্য করে, খেলনা শেয়ার করে, বা নম্র কথা বলে—তাদের প্রশংসা করুন। এই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তাদের এই গুণাবলি ধরে রাখতে উত্সাহ দেয়।

১০. ধৈর্য ধরুন ও নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করুন

এই গুণাবলিগুলো রাতারাতি গড়ে উঠে না। প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসের মাধ্যমে শিশুদের বোঝান আর ধীরে ধীরে তাঁদের মনোজগতে মূল্যবোধ গড়ে তুলুন।

বাস্তব জীবনের কিছু কার্যকর অভ্যাস

  • খাবার টেবিলে শিষ্টাচার চর্চা করুন
  • দরজা খুলে রাখলে “ধন্যবাদ” বলা শেখান
  • পড়াশোনায় দুর্বল বন্ধুদের তুচ্ছ না করতে বলুন
  • “স্যরি”, “প্লিজ”, “ধন্যবাদ” শেখাতে গল্প বলুন
  • নিজের ভুল স্বীকারের অধ‍্যায়ে আপনিও “আমি ভুল করেছি” বলতে শিখুন—এটি তার জন্য দৃষ্টান্ত হবে

উপসংহার

সন্তানকে কৃতজ্ঞতা শেখানো শুধু সামাজিক সৌজন্য নয়, বরং তা তার ভবিষ্যৎ জীবনে এক অনন্য মূল্য সংযোজন। কৃতজ্ঞতা একজন মানুষকে নম্র, দয়ালু ও সহানুভূতিশীল করে তোলে। সন্তান যখন ছোট, তখন থেকেই এই গুণগুলো চর্চা করলে তা আজীবন স্থায়ী হয়।

আপনি যদি প্রতিদিনের ছোট অভ্যাসের মাধ্যমে এই শিক্ষা দিয়ে যেতে পারেন, তবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আরও মানবিক, কৃতজ্ঞ এবং সৌন্দর্যপূর্ণ এক সমাজ গড়তে পারবে।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।